বিশেষ ব্যক্তি

কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহন করা বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি বর্গ

মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি বীর প্রতীক

তারামন বিবি

১৯৭১ এর টানা ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফলে অর্জিত এই বাংলাদেশ। এই জয় লাভ কতোই না শহিদ এবং সাহসি বীরের বীরত্বের ফল। বাংলাদেশের ২ জন বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধার একজন তারামন বিবি যার জন্মস্থান কুড়িগ্রামের শংকর মাধবপুর গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারামন বিবি কুড়িগ্রাম জেলার নিজ গ্রাম শংকর মাধবপুরে ছিলেন। সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের বীর উত্তম এর আওতায় তিনি সেক্টর ১১ তে যুদ্ধ করেছিলেন। 

৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে যোগদান: তারামন বিবি মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধার কথায়। তিনি তারামন বিবির পাশের গ্রামের একটি ক্যাম্পে দ্বায়িত্বরত ছিলেন। মাত্র ১৩ কিংবা ১৪ বছর বয়সে তিনিই তারামনকে ক্যাম্পে নিয়ে আসেন রান্নাবান্নার জন্য। কিন্তু পরবর্তীতে তারামন বিবির সাহস ও শক্তি দেখে মুহিব হাবিলদার তাকে অস্ত্র চালানো শেখান। তারামন বিবি স্টেনগান ও রাইফেল চালানো শিখেছিলেন।

সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহন: তারামন বিবির সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহন করার ইচ্ছা শক্তি ছিলো প্রচুর। একদিন দুপুর বেলা খাবার খাওয়ার সময় তারামন ও তার সহযোদ্ধারা খবর পান পাকহানাদার বাহিনীর একটি গানবোট তাদের ক্যাম্পের দিকে আসছে। তারামন তার সহযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে অংশ নেন এবং তারা শত্রুদের পরাস্ত করতে সক্ষম হন। তিনি ১১ নম্বর সেক্টরে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকদের সাথে কুড়িগ্রাম জেলার নদী-তীরবর্তী অঞ্চল মোহনগঞ্জ, তারাবর, কোদালকাটি ও গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়িতে কয়েকটি সশস্ত্র যুদ্ধে বীরত্বের সাথে অংশ নেন। রাজিবপুর রণাঙ্গনে কিশোরী তারামন বিবি নির্ভয়ে ও সাহসিকতার সাথে গোয়েন্দাবৃত্তির কাজ করেন। খাড়িয়াভাঙ্গা ও ভেলামারি খাল এরিয়ায় পাকবাহিনির ঘাঁটির অবস্থান সম্পর্কে তাঁর প্রদান করা নির্ভুল তথ্যের ভিত্তিতে সংঘঠিত হয়েছিলো সফল অভিযান। অনেক যুদ্ধে তারামন বিবি পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অংশগ্রহন করেন। তারামন বিবি কখনই নিজের কথা ভাবেননি। পাকবাহিনী  অনেক বার তাদের ক্যাম্প আক্রমন করেছিলো, কিন্তু ভাগ্য সহায় থাকায় প্রতিবারই তিনি প্রানে বেঁচে যান।

পুরস্কার ও সন্মাননা: তৎকালীন মুজিব সরকার মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবির বীরত্ব ও সাহসীকতা দেখানোর জন্য ১৯৭৩ সালে তাঁকে “বীর প্রতীক” উপাধিতে ভূষিত করেন। তবে পরবর্তিতে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাঁকে কোথাও খুজে পাওয়া যায় নি। এরপর ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায় পরে নারী সংগঠনগুলো ওনাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। সেই সময় তারামন বিবিকে নিয়ে পত্রিকায় খুব লেখালেখি হয়ছিলো। অতপর ১৯৯৫ সালের ১৯শে ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে তারামন বিবিকে বীরত্বের পুরস্কার ওনার হাতে তুলে দেয়া হয়েছিলো।

সৈয়দ শামসুল হক

সৈয়দ শামসুল হক ছিলেন বাংলাদেশের সুনামধন্য কবি, উপন্যাসিক, অনুবাদক, চিত্রনাট্য রচয়িতা, গল্পকার, নাট্যকার, প্রবন্ধকার, সংলাপ লেখক ও গীতিকার। তিনি ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর এই কুড়িগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। কুড়িগ্রাম শহরেই ছোট থেকে ওনার বেড়ে ওঠা।

সৈয়দ শামসুল হক ছিলেন একজন প্রতিভাবান লেখক। তাঁর বিচরণ ছিলো সাহিত্যের সকল শাখায় – কবিতা, নাটক, গল্প ওউপন্যাসের জগতেও । তাঁর উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে খেলারাম খেলে যা , নিষিদ্ধ লোবান, আয়না বিবির পালা। কবিতা গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে  একদা এক রাজ্যে, অপরপুরুষ। আর নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় ইত্যাদি। সৈয়দ শামসুল হকের ১ ছেলে এবং ১ মেয়ে সন্তান রয়েছে, ওনার সহধর্মিনির নাম ডাঃ আনোয়ারা সৈয়দ হক। একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পদক সহ অসংখ্য জাতীয় পদক লাভ করেছেন এই মহৎ মনিষী। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের পাতায় সৈয়দ শামসুল হক এক জলন্ত প্রদীপ।

হাবিবুর রহমান

হাবিবুর রহমান
হাবিবুর রহমান হলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) এর ৬ষ্ঠ উপাচার্য। তিনি কুড়িগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহন করেন। উনি হলেন কুড়িগ্রামের গর্বিত সন্তান।

শামসুল হক চৌধুরী

শামসুল হক চৌধুরী
শামসুল হক চৌধুরী ছিলেন এক জন মুক্তিযোদ্ধা, কুড়িগ্রাম জেলার সাবেক গভর্নর। তিনি কুড়িগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহন করেন। তিনি কুড়িগ্রাম জেলার রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন যিনি তৎকালীন রংপুর-১২ ও রংপুর-১৩ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।

Related Post