উলিপুরের বিখ্যাত ক্ষীরমোহন
- by Touhid
- Popular Foods
- 2 months ago
- 151 views
উলিপুরের ক্ষীরমোহন: উত্তরবঙ্গের এক স্বাদের স্মৃতি
বাংলাদেশের মিষ্টান্নের রাজ্যে যেন অগণিত রত্ন ছড়িয়ে আছে। মুক্তাগাছার মণ্ডা,টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, সাতক্ষীরার সন্দেশ, নওগাঁর প্যারা সন্দেশ, নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি, বিক্রমপুর ও কলাপাড়ার রসগোল্লা, বগুড়ার দই – নাম শুনলেই জিভে যেন জল আসে। এসবের মাঝেও উত্তরবঙ্গের নিজস্ব এক স্বাদ ও সৌরভের জগৎ রয়েছে, যার কথা কমই আলোচনা হয়। সেই স্বাদের জগতের এক মহারাজ হল কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরের ক্ষীরমোহন। এটি শুধু একটি মিষ্টি নয়, এ যেন এক স্বাদের ভান্ডার, উলিপুরের সান এবং প্রতিটি ভ্রমণপিপাসুর জন্য এক অমৃত উপহার।
ক্ষীরমোহন কি এবং এটির বিশেষত্বই বা কী?
ক্ষীরমোহন উলিপুরের একটি জনপ্রিয় এবং সুস্বাধু মিষ্টান্ন যা দেখতে অনেকটা ঘী রঙ্গের ও লম্বাটে গোলাকার। তবে উলিপুরের ক্ষীরমোহনের রয়েছে নিজস্ব এক পরিচিতি:
স্বাদের সমাহার: এটির স্বাদ একইসাথে মিষ্টি, মাখনেল এবং হালকা এলাচ-সুগন্ধি। প্রথম কামড়েই তুলোর মতো নরম, স্পঞ্জের মতো টেক্সচার বুঝে যাবেন।
রসের ভারসাম্য: এটি সাধারনত রসমালাইয়ের চেয়ে কিছুটা শুকনো, কিন্তু ভেতরে রয়েছে ক্ষীর ও চিনির সিরার পরিমিত মিশ্রণ। ফলে এটি অতিরিক্ত মিষ্টি নয়, বরং সুস্বাদু।
সৌরভ: দুধ ও এলাচের সুগন্ধ যেকোনো মানুষের মন জয় করে নেয় নিমিশেই।
ক্ষীরমোহন কীভাবে তৈরি করা হয়?
উপকরণ:
তাজা ছানা
ময়দা (স্বল্প পরিমাণ)
চিনি (সিরা তৈরির জন্য)
দুধ ও ক্ষীর
এলাচ গুঁড়ো
কেওড়া জল (বৈশিষ্ট্য যোগ করতে)
পিস্তা-বাদাম (সাজানোর জন্য)
তৈরির ধাপ:
মণ্ডন প্রস্তুত: প্রথমে তাজা ছানা ভালোভাবে হাতের তালু দিয়ে মতলে নিতে হয়। তারপর অল্প পরিমাণে ময়দা এবং এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে নরম মণ্ডন তৈরি করা হয়।
আকৃতি দেওয়া: মণ্ডন থেকে মাঝারি আকারের পটল এর ন্যায় লম্বাটে গোলাকার বল তৈরি করা হয়। মিষ্টি গুলো খুব নরম ও মসৃণ হতে হবে।
সেদ্ধ করা: এর পর মিষ্টি গুলো কে চিনির সিরার মধ্যে জাল দিয়ে সেদ্ধ করা হয়। সেদ্ধ হওয়ার পর মিষ্টি গুলো ফুলে উঠে এবং হালকা হয়ে যায়।
ক্ষীর প্রস্তুত করা: খাটি গরুর দুধ কে জাল দিয়ে দিয়ে ঘন ক্ষীরে রুপান্তর করা হয়।
ক্ষীরে মিষ্টি ডুবানো: চিনির সিরা থেকে প্রস্তুতকৃত মিষ্টি গুলো কে এই ঘন ক্ষীরে ডুবিয়ে রাখা হয়। কমপক্ষে ৪-৫ ঘন্টা রেখে দিতে হয় যাতে মিষ্টি ক্ষীর শোষণ করে নেয় এবং প্রস্তুত হয়ে যায় উলিপুরের বিখ্যাত ক্ষীর মোহন।
পরিবেশন: শেষ পর্যায়ে ক্ষীরমোহন গুলোকে পাত্রে সাজিয়ে ওপরে পেস্তা বাদামের গুড়া দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
উলিপুরের ক্ষীরমোহন কেবল মাত্র একটি মিষ্টি ই নয়, এটি উত্তরবঙ্গের রুচির প্রতীক। এটি উলিপুরের মানুষের ঐতিহ্যের অংশ, তাদের আতিথেয়তা ও তাদের সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে। তাই, আপনি যদি কখনও উলিপুরে ভ্রমনে যান, অবশ্যই ক্ষীরমোহন এর স্বাদ গ্রহন করে আসবেন। এই স্বাদ আপনাকে তৃপ্ত করবে, আর স্মৃতি হয়ে থাকবে হৃদয়ে। এটি শুধু আপনার পেট ভরাবে না, মনও ভরিয়ে দেবে।
Related Listing
বৈশাখী হোটেল এন্ড রেস্তোরা, পাটেশ্বরী বাজার
- 7 months ago
- Popular Foods
নাককাটি বাজারের হাঁসের মাংস
- 2 years ago
- Popular Foods

