About Kurigram
কুড়িগ্রাম জেলা বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের একটি জেলা। এটি দেশের উত্তরাঞ্চলে ভারতের সীমান্ত বরাবর অবস্থিত। কুড়িগ্রাম একটি প্রধানত গ্রামীণ জেলা যেখানে বেশিরভাগ জনসংখ্যার আয়ের প্রধান উৎস কৃষি। জেলাটি কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কাঠ সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদের আবাসস্থল।
অবস্থান ও আয়তন
কুড়িগ্রাম জেলার উত্তরে লালমনিরহাট জেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে গাইবান্ধা জেলা ও জামালপুর জেলা, পূর্বে ভারতের আসাম, পশ্চিমে লালমনিরহাট জেলা ও রংপুর জেলা।
কুড়িগ্রামের মোট আয়তন ২,২৩৬.৯৪ বর্গকিলোমিটার (৮৬৩.৬৯ বর্গমাইল)।
কুড়িগ্রামের ইতিহাস
কুড়িগ্রামের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। প্রত্নপ্রস্তর যুগে এই অঞ্চলে বাস করত নিগ্রো জাতি। এরপর আসে নব্যপ্রস্তর যুগ। আসামের উপত্যকা অতিক্রম করে আসে অস্ট্রিক জাতীয় জনগোষ্ঠী। তারপরে আসে দ্রাবিড় ও মঙ্গোলীয়রা। এদের মিলিত স্রোতে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় মানবসভ্যতার সূচনা হয়।
বারো বা দ্বাদশ শতকের প্রথমপর্বে এ অঞ্চলে সেন রাজবংশের শাসনকাল আরম্ভ হয়। রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চত্রা নামক গ্রামে এদের রাজধানী ছিল। এ বংশের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন রাজার নাম নীলধ্বজ সেন, চক্রধ্বজ সেন, নীলাম্বর সেন। সেনবংশের পতনের পর শুরু হয় মুঘল যুগ।
মুঘল আমলে কুড়িগ্রাম ছিল গৌড়ের একটি অঞ্চল। পরবর্তীতে ব্রিটিশ আমলে এটি কুড়িগঞ্জ নামে একটি মহকুমায় পরিণত হয়। ১৮৭৫ সালের ২২ এপ্রিল কুড়িগ্রাম মহকুমার সূচনা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় কুড়িগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানকার মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে।
কুড়িগ্রামের নামকরণের ইতিহাস
কুড়িগ্রামের নামকরণের ইতিহাস নিয়ে অনেক কিংবদন্তি রয়েছে। তবে কোন কিংবদন্তিই প্রশ্নাতীত নয়।
একটি কিংবদন্তি অনুসারে, একসময় মহারাজা বিশ্ব সিংহ কুড়িটি জেলে পরিবারকে উচ্চ শ্রেণীর হিন্দুরূপে স্বীকৃতি দিয়ে এ অঞ্চলে প্রেরণ করেন। এ কুড়িটি পরিবারের আগমনের কাহিনী থেকে কুড়িগ্রাম জেলার নামকরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
আরেকটি কিংবদন্তি অনুসারে, রঙ্গপুর অর্থাৎ এই অঞ্চল একদা ছিল কুচবিহার রাজ্যের অন্তর্গত। কুচবিহারের বাসিন্দাদের বলা হয় কোচ। এরা তিওড় গোষ্ঠীবিশেষও। মাছ ধরে বিক্রি করা তাদের পেশা। সুবিধাবঞ্চিত নিচু শ্রেণীর এই হিন্দু কোচদের কুড়িটি পরিবারকে সেখান থেকে এখানে প্রেরণ করা হয়েছিল বা আনয়ন করা হয়েছিল বসতি স্থাপনে জন্য। ওই কুড়িটি কোচ পরিবারের কারণে ‘কুড়িগ্রাম’ নামকরণ হয়েছে।
এছাড়াও, আরেকটি কিংবদন্তি অনুসারে, এই গ্রামে কুরি বা কুরী নামক একটি হিন্দু আদিবাসী বা নৃগোষ্ঠী বসবাস করত বলেই অঞ্চলটির নাম হয় ‘কুড়িগ্রাম’। অদ্যাবধি এখানে ‘কুরি’ নামক আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস লক্ষ্য করা যায়। এখনও এ অঞ্চলে কুড়ি হিসেবে গোনার পদ্ধতি চালু রয়েছে। বিশিষ্ট পণ্ডিত জা পলিলুস্কি প্রমাণ করেছেন, গণনার এ পদ্ধতি বাংলায় এসেছে কোল ভাষা থেকে। কোল অস্ট্রিক ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। আরব অস্ট্রিক ভাষায় কুর বা কোর ধাতুর অর্থ হলো মানুষ। কুড়ি হিসেবে গোনার পদ্ধতিটিও এসেছে মানুষ থেকেই।
জনসংখ্যার উপাত্ত
২০২২ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী, কুড়িগ্রামের মোট জনসংখ্যা ১৮০১৩৫৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯০৫৯৪৪ জন এবং মহিলা ৮৯৫৪১২ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৭৬১ জন।
কুড়িগ্রামের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৭৮%। ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী, কুড়িগ্রামের জনসংখ্যা ছিল ১৪২৭৫৭৮ জন।
কুড়িগ্রামের ভোটার সংখ্যা
কুড়িগ্রামের মোট ভোটার সংখ্যা ১০৮১১৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৪১৮৯৫ জন এবং মহিলা ৫৮১০৬২ জন।
২০২৩ সালের ২৫শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম জেলার তিনটি সংসদীয় আসনের জন্য ভোটার সংখ্যা নিম্নরূপ:
- কুড়িগ্রাম-১: ১৬৭৪২৯ জন
- কুড়িগ্রাম-২: ৩১২৫৪৭ জন
কুড়িগ্রাম-৩: ৩৯০১৮৩ জন
শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য
এ জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা বেশ উন্নত। ২০২২ সালের হিসাবে, কুড়িগ্রামের শিক্ষার হার শতকরা ৫৬%।
প্রাথমিক শিক্ষা
কুড়িগ্রাম জেলায় প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ৬৪৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৬৮০টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়াও, জেলায় 168 টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কিন্ডারগার্টেন স্কুলের তালিকা দেওয়া হলো:
প্রাথমিক বিদ্যালয়
- কুড়িগ্রাম পিটিআই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- রাজারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- কুড়িগ্রাম (১) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- কুড়িগ্রাম মডেল স্কুল
কিন্ডারগার্টেন স্কুল
- শিশু নিকেতন,কুড়িগ্রাম
- সানরাইজ কিন্ডারগার্টেন স্কুল
- গুড মর্নিং কিন্ডারগার্টেন স্কুল
- শিবরাম মডেল প্রি-ক্যাডেট স্কুল
মাধ্যমিক শিক্ষা
কুড়িগ্রাম জেলায় মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য ২৬৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬৪টি উচ্চ বিদ্যালয়, ১টি বহুমুখী স্কুল এবং ১টি ক্যাডেট স্কুল রয়েছে। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় মাধ্যমিক বিদ্যালয় তালিকা দেওয়া হলো:
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়:
- কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
- কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- উলিপুর মহারাণী স্বর্ণময়ী উচ্চ বিদ্যালয়
- রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়
বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়
- আইডিয়াল পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ
- কুড়িগ্রাম মডেল স্কুল
- কুড়িগ্রাম কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ
- বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল
উচ্চশিক্ষা
কুড়িগ্রাম জেলায় উচ্চশিক্ষার জন্য ১টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ৬৪টি কলেজ, ২টি কামিল মাদ্রাসা এবং ৪টি ফাজিল মাদ্রাসা রয়েছে। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় সরকারি এবং বেসরকারি কলেজের তালিকা দেওয়া হলোঃ
- কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ
- কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ
- উলিপুর সরকারি কলেজ
- রৌমারী সরকারি ডিগ্রি কলেজ
- কুড়িগ্রাম টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ
- মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ
- খলিলগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজ
- কুড়িগ্রাম সিটি কলেজ
দর্শনীয় স্থান সমূহের তালিকা
কুড়িগ্রামে বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যেগুলো প্রকৃতির মনোময় সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্যবাহী ঐতিহ্যের মিশ্রণ উপস্থাপন করে। এখানে কুড়িগ্রামের কিছু জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানের তালিকা দেয়া হলো:
- ধরলা সেতু
- ধরলা সেতু-২,ফুলবাড়ী উপজেলা
- সোনাহাট স্থলবন্দর,
- ভূরুঙ্গামারী উপজেলা
- প্রথম আলো চর
- দাশেরহাট কালী মন্দির
- কুড়িগ্রামের ১ম শহীদ
- মিনার(মজিদা কলেজ)
- শাপলা চত্বর(কুড়িগ্রাম শহীদ মিনার)
- বিজয়স্তম্ভ (স্টেডিয়াম সংলগ্ন)
- ঘোষপাড়া মুক্তিযোদ্ধো স্মৃতি ফলক
- শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলক
- উত্তরবঙ্গ জাদুঘর (নতুন শহর)
- চান্দামারী মসজিদ
- চিলমারী বন্দর
- জয়মনিরহাট জমিদার বাড়ি ভূরুঙ্গামারী উপজেলা
- মাধাইখাল কালী মন্দির-নাগেশ্বরী উপজেলা
- বহলকুড়ি ভারত ও বাংলাদেশ ১০০১ নাম্বার রাষ্ট্রীয় সীমানা চুক্তি পিলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলা
- টগরাইহাটের অচিন গাছ।
- কোটেশ্বর শিব মন্দির
- পাঙ্গা জমিদার বাড়ি
- ঘড়িয়ালডাঙ্গা জমিদার বাড়ি
- টুপামারী (জিয়া পুকুর)
- উলিপুর মুন্সিবাড়ী
- ধামশ্রেণী মন্দির
- জালার পীরের দরগাহ
- উদুনা-পুদুনার বিল
- বেহুলার চর
- ভেতরবন্দ জমিদার বাড়ি
- সোনাহাট ব্রিজ ভূরুঙ্গামারী উপজেলা
- ফুল সাগর
- নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি
- চতুর্ভূজ সেনপাড়া শিব মন্দির
- ধলডাঙ্গা বাজার ভূরুঙ্গামারী উপজেলা
- কালজানি ঘাট ভূরুঙ্গামারী উপজেলা
- তুরা বন্দর,রৌমারী উপজেলা
- রাজিবপুর সীমান্ত হাট
- জেলার ১৬ টি নদ-নদী
- চাকিরপাশার বিল।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
কুড়িগ্রাম জমি জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশের আবহমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা অনেক সাহিত্যিক, শিল্পী, মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদকে। এখানে কুড়িগ্রামের কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেয়া হলো:
- সৈয়দ শামসুল হক, ( বাঙালি সাহিত্যিক )
- আব্বাসউদ্দীন আহমদ, ( সঙ্গীতশিল্পী )
- কছিম উদ্দিন, ( ভাওয়াইয়া সঙ্গীতশিল্পী )
- ভবানী পাঠক, ( ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সন্ন্যাসীদের নেতা )
- ভূপতি ভূষণ বর্মা, ( ভাওয়াইয়া ভাস্কর )
- অজিত রায়, (স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত)
- শামসুল হক চৌধুরী, ( মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক গভর্নর ও সাবেক সংসদ সদস্য)
- তারামন বিবি, ( বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা )
- আমজাদ হোসেন তালুকদার, ( মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য )
- আব্দুর রহমান (বুদ্ধিজীবী)
- রমণীকান্ত নন্দী (শহীদ বুদ্ধিজীবী)