রৌমারী উপজেলা বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।এটি মুক্তাঞ্চল উপজেলা হিসেবে খ্যাত।
উপজেলা পরিচিতি
রৌমারী উপজেলা তার মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির জন্য বহুল পরিচিত। কুড়িগ্রামের মূল ভূখণ্ডের সাথে এই উপজেলাটির কোনো সংযোগ সড়ক নেই,শুধু জল ভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে।এই উপজেলাটি জামালপুর জেলার খুবই সন্নিকটে এবং ঢাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ ভালো।
নামকরণের ইতিহাস
ধারণা করা হয়, প্রাচীনকালে এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে রুই মাছ পাওয়া যেত, এ কারণে এ অঞ্চলটি ‘রুইমারী’ নামে পরিচিত ছিলো; যা কালক্রমে রৌমারী নামে রুপান্তরিত হয়।
অবস্থান ও আয়তন
কুড়িগ্রাম জেলার দক্ষিণাংশে রৌমারি উপজেলার অবস্থান। এ উপজেলার উত্তরে উলিপুর উপজেলা ও ভারতের আসাম, দক্ষিণে চর রাজিবপুর উপজেলা, পূর্বে ভারতের আসাম. পশ্চিমে চর রাজিবপুর উপজেলা, চিলমারী উপজেলা ও উলিপুর উপজেলা।
জনসংখ্যার উপাত্ত
নির্বাচন অফিস তথ্যমতে,রৌমারী উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৫৭ হাজার ১শত ৫০জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৯ হাজার ১৭৩ জন ও নারী ভোটার ৭৭ হাজার ৯৭৭জন।
প্রশাসন সংক্রান্ত তথ্য
রংপুর জেলার অধীনে রৌমারী থানা গঠিত হয় ১৯০৮ সালে এবং ১৯৮৩ সালের ১ আগস্ট থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। এ উপজেলায় কোনো পৌরসভা নাই ও ৬টি ইউনিয়ন রয়েছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রশাসনিক কার্যক্রম রৌমারী থানার আওতাধীন।
সংসদীয় এলাকার সংখ্যা:
১টি এলাকা রয়েছে । নাম ও এলাকা: কুড়িগ্রাম- ৪ (চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর)
ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা:
মোট ৬ টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে ।
রৌমারী
যাদুর চর
শৌলমারী
দাঁতভাঙ্গা
বন্দবেড়
চর শৌলমারী
শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য
২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী রৌমারী উপজেলার সাক্ষরতার হার ৪৩%। এ উপজেলায় ৮টি কলেজ, ২টি কারিগরি কলেজ, ২৬টি উচ্চ বিদ্যালয়, ১০৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি ফাজিল মাদ্রাসা, ১টি আলিম মাদ্রাসা ও ১৩টি দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
কলেজ
রৌমারী ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৪)
রৌমারী মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৫)
যাদুর চর ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৯)
যাদুর চর মডেল কলেজ (১৯৯৯)
চর শৌলমারী ডিগ্রী কলেজ(১৯৯৫)
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কলেজ,পাখিউড়া(২০১১)
চর শৌলমারী আদর্শ মহিলা কলেজ(২০১৩)
উচ্চ বিদ্যালয়
টাপুরচর উচ্চ বিদ্যালয়(১৯৪১)
যাদুর চর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬)
রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৮)
চর শৌলমারী বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়(১৯৭০)
শৌলমারী এম আর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮৬)
চর শৌলমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
কাজাইকাটা জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়
সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয
অর্থনীতি সংক্রান্ত তথ্য
রৌমারী উপজেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। তাছাড়া ওখানে ছোট ও মাঝারি ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
কৃষি
রৌমারী উপজেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১৫,৫৫৫ হেক্টর। এ উপজেলার জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৭.৪০%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৫৭%, শিল্প ০.৮০%, ব্যবসা ৬.৪০%, পরিবহন ও যোগাযোগ ০.৫৭%, চাকরি ৩.২৫%, নির্মাণ ০.৪৯%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৭% এবং অন্যান্য ৭.৩০%।
ভূমিমালিক ৫৫.০৫%, ভূমিহীন ৪৪.৯৫%। শহরে ৪৫.৩৪% এবং গ্রামে ৫৬.৪৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
রৌমারী উপজেলায় ৬৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ৪৮৯ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ও ৩০ নটিক্যাল মাইল নদীপথ রয়েছে।
দর্শনীয় স্থান সমূহের তালিকা
রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির জন্য বহুল পরিচিত। এই উপজেলায় রয়েছে অসংখ্য পর্যটন ও সাংস্কৃতিক স্থান, যা পর্যটক ও দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয়।
বলদমারা ঘাট
ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত বলদমারা ঘাট থেকে নদীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এখানে নৌকা ভ্রমণ ও স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরার কাজ দেখা যায়।
পাখিউড়া ব্রিজ (চর শৌলমারী ইউনিয়ন)
ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর দিয়ে নির্মিত পাখিউড়া ব্রিজটি নদী ও আশেপাশের গ্রামগুলোর মনোরম দৃশ্য উপহার দেয়। দর্শনার্থীরা ব্রিজের ওপর হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।
বড়াইবাড়ি
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী এই স্থানে তিন শহীদ বীরের স্মৃতিতে “শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ” নির্মিত হয়েছে। দর্শনার্থীরা এখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতে পারেন।
চানমারী
হ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত এই গ্রামটি তার ঐতিহ্যবাহী নৌকা নির্মাণ শিল্পের জন্য বিখ্যাত। দর্শনার্থীরা নৌকা নির্মাণের কাজ দেখতে পারেন এবং নদীতে নৌকা ভ্রমণও উপভোগ করতে পারেন।
ফলুয়ার চর নৌকা ঘাট
এই নৌকা ঘাট থেকে ব্রহ্মপুত্র নদী পার হয়ে পশুর গাছপাতা ও নিরিব পরিবেশে বিখ্যাত ফলুয়ার চর দ্বীপে পৌঁছানো যায়।
রৌমারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে রৌমারীতে নির্মিত এই মিনারে দর্শনার্থীরা শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতে পারেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য করা ত্যাগের কথা জানতে পারেন।